কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যবসায়ীদেরকে গ্যাসের কেনা দামটা দিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজ সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসে সাধ্যমতো ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু দাম বিশ্ব বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প খাতে গ্যাসে ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে হয়েছে। তবে গ্যাস যে মূল্যে কেনা হবে সেই মূল্য গ্রাহককে দিতে হবে।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার প্রধান এসব কথা বলেন।

এদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অফ অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, আইএমএফের ঋণের শর্তে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সরকার কীভাবে সামলাবে?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ তখনই ঋণ দেয় যখন ওই দেশের তা পরিশোধের যোগ্যতা থাকে। আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসে এখনও ভর্তুকি দিচ্ছি। কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি আমরা। তাতে সফল হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন হলো পৃথিবীর কোন দেশ গ্যাস আর বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়? কেউ দেয় না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম ১৫০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। আমরা তো মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ালাম।

এলএনজি আমরা যেটা ৬ ডলারে স্পট প্রাইসে কিনতাম, সেটা এখন ৬৮ ডলার। কত ভর্তুকি দেবে সরকার? সরকার যে ভর্তুকিটা দেবে সেটা তো জনগণেরই টাকা। আর দ্রব্যমূল্য আজ সারা বিশ্বেই বৃদ্ধি পেয়েছে।’

ভর্তুকি প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন-বিতরণে যদি ৪০, ৫০ ও ৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় তাহলে সেটা কী করে দেব? দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার যে চেষ্টা সেটা করে কিছুটা সফলতা দেখাতে পেরেছি। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা আছেন। এখানেও (সংসদে) আছেন। তাদের আমি তো স্পষ্ট করেই বলেছি- যে মূল্যে গ্যাস আমরা বাইরে থেকে কিনে আনলাম সেই মূল্য যদি আপনারা দেন আমরা গ্যাস দিতে পারব। আমরা বাল্কের যেটুকু বাড়ানোর বাড়িয়েছি। তারা যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ চায় তাহলে যে মূল্যে কিনে আনব সেই মূল্য তাদের দিতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম কম থাকলে আমাদের বিত্তশালীরা লাভবান হন। যারা সাধারণ মানুষ তারা ঠিকমত বিল দেয়। বিত্তশালীরা আরাম-আয়েশ করবে আর স্বল্প মূল্যে বিদ্যুৎ পাবে তা কী করে হয়? সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, আমরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির ফেয়ার প্রাইস কার্ড দিয়ে দিয়েছি। সেখানে তারা ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারে। তেল, চিনি, ডাল সীমিত আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারে।

যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদেরকে বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করছি। স্বল্প আয়ের মানুষ যাতে কষ্টে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রেখে এই ব্যবস্থা করছি। কৃষিতে আমরা ব্যাপকভাবে ভর্তুকি দিচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির সদস্য চুন্নু বলেন, ‘ডোনাল্ড লু পাকিস্তান সফরের পর তেহরিক-ই ইনসাফ ক্ষমতাচ্যুত হয়। তিনি বাংলাদেশে আসার পর অনেকে মনে করেছিল সরকারের কিছু একটা হবে। কেন জানি না তিনি যাওয়ার পর সরকারকে খুব খুশি খুশি লাগছে। আবার একটি দল মনে হয় খুবই অখুশি।

আমরা জাতীয় পার্টি এটাকে ওইভাবে নিচ্ছি না। এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছি। বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাটায় মানুষের মাঝে একটি গুঞ্জন আছে- অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার কারণে কিছু একটা না হয়ে যায়! এ ধরনের কিছু আছে কি না?’

এক পর্যায়ে বক্তব্য চলাকালেই চুন্নুর মাইক বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী তার এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

উল্লেখ্য, সর্দি জ্বরে আক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সংসদে এম আব্দুল লতিফের মৌখিক প্রশ্নে দীর্ঘ ১৭ পৃষ্ঠার জবাব দেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে উত্তর দিতে গিয়ে তিনি কিছুটা অসুস্থ বোধ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বসে তার বক্তব্যের বাকি অংশ পঠিত বলে গণ্য করতে স্পিকারের প্রতি অনুরোধ করেন।

পাঠকের মতামত: